জীবন বিমার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস || History of Life Insurance - Life Insurace - bangla life insurance blog | লাইফ ইন্সুরেন্স

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Translate

রবিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২২

জীবন বিমার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস || History of Life Insurance

জীবন বিমার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস : জীবনের ঝুঁকি আর্থিকভবে মোকাবেলা ব্যবস্থা হিসাবে বিমা চুক্তির প্রচলন কখন শুরু হয়েছে তার সুস্পষ্ট সময়কাল জানা না গেলেও নৌবিমা চুক্তির প্রচলনের পর যে তা শুরু হয়েছে তা সুস্পষ্ট ভাবে জানা যায় । তেরশ ' শতাব্দীর শেষ দিকে নৌবিমা পত্র সংগ্রহকালে জাহাজ মালিকগণ কেবলমাত্র জাহাজে ভ্রমণরত ব্যবসায়ী ও কাপ্তানদের জন্য যাত্রাকালীন জীবন বিমার চুক্তি করত বলে জানা যায় । পরবর্তীতে অন্যান্য ক্ষেত্রেও তা কিছুটা প্রসারিত হয় । বিট্রিশ জাদুঘরে রক্ষিত এক জীবন বিমাপত্র হতে জানা যায় , লন্ডনে লবন ব্যবসায়ী উইলিয়াম গীবন ছিলেন পৃথিবীর প্রথম জীবন বিমা গ্রহীতা । ১৫৮৩ সালের ১৮ জুন রিচার্ড মার্টিন নামক একজন বিমা ব্যবসায়ী , উইলিয়াম গীবন নামক জনৈক লবণ ব্যবসায়ীর ১২ মাসের জন্য জীবন বিমা করিয়ে ছিলেন । 

ইতিহাস থেকে জানা যায় , ইংল্যান্ডে সতের শতাব্দী হতে মৃত্যুর খতিয়ান রাখা শুরু হয় । মৃত্যুর এই পরিসংখ্যান হতেই আবিস্কৃত হয় মৃত্যুহারপঞ্জি ( Mortality Table ) । এর পর হতেই জীবন বিমা ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের যুগ শুরু হয় । ১৬৯৬ সালে ইংল্যান্ডে " Hand in Hand " নামে প্রথম জীবন বিমা প্রতিষ্ঠান খোলা হয় । ১৬৯৯ সালে " The Society of Widows and Orphans " নামে একটি সমিতি গঠন করা হয় । এ সমিতির যারা সদস্য তাদের কেউ মারা গেলে ৫০০ পাউন্ড ক্ষতিপূরণ দেয়া হতো । ১৭০৫ সালে হার্টলে নামক একজন পুস্তক ব্যবসায়ী লন্ডনের কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তির সহযোগিতায় " Amicable Socity for Perpetual Assurance " নামে একটি জীবন বিমা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন । সুনির্দিষ্ট এবং সুসংঘবদ্ধভবে জীবন বিমা ব্যবসায় পরিচালনার ক্ষেত্রে এ প্রতিষ্ঠানটাই সম্ভবত জীবন বিমার ইতিহাসে প্রথম জীবন বিমা সংস্থা । আজ থেকে প্রায় দুইশত বছর আগে বৃটিশ ব্যবসায়ী ও খ্রিষ্টান মিশনারীদের মাধ্যমে তৎকালীন বৃটিশ ভারতে জীবনবিমার আবির্ভাব ঘটে । আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে " ওরিয়েন্টাল লাইফ ইনুসওরেন্স " নামে তৎকালীন ভারতবর্ষে প্রথম জীবন বিমার প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করে ১৮১৮ খ্রিষ্টাব্দে । প্রতিষ্ঠানটির জন্ম হয়েছিল মূলত বৃটিশ সৈন্যদের জীবন বিমা করার জন্য । এর প্রায় পাঁচ বছর পর ১৮২৩ সালের পহেলা মে তারিখে প্রতিষ্ঠা লাভ করে বোম্বে লইফ ইনসিওরেন্স এবং ১৮২৯ সালে মাদ্রাজে প্রতিষ্ঠিত হয় " মাদ্রাজ ইকুইট্যাবল " । এরপর ১৮৪৭ সালে " খ্রিষ্টান মিউচুয়াল " নামে আরও একটি জীবন বিমা প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয় যুক্ত প্রদেশর মীরাটে এবং পরবর্তীতে তা লাহোরে স্থানান্তরিত করা হয় ।


 বাঙ্গালীদের মুলধনে গঠিত ও পরিচালিত প্রথম বিমা কোম্পানী প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫৮ সালে । এর নাম ছিল " হোমল্যান্ড ইনসিওরেন্স কোং " যার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মরহুম শেখ মজিবুর রহমান । ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয় । তখন বাংলাদেশ রেজিস্ট্রিকৃত ৬৭ টি কোম্পনির মধ্যে ১৫ টি ছিল বাংলাদেশী , ২৯ টি পাকিস্তানী এবং ২৩ টি অন্যান্য দেশের । ২৯ টি পাকিস্তানী কোম্পানীর ব্যবসা দেখাশোনা করার জন্যে সরকার ১৯৭২ সালের ২৫ শে জানুয়ারী একটি অধ্যাদেশ জারী করে এসব কোম্পানী পরিচালনার জন্য এ্যাডমিনিস্ট্রেটর নিয়োগ করেন । এর কিছুদিন পর সরকার জাতীয়করণের পূর্ববর্তী ব্যবস্থা হিসাবে প্রতিটি দেশী বিদেশী কোম্পানীর জন্য কাষ্টোডিয়ান নিয়োগ করেন । পাঁচ মাস পর ১৯৭২ সালের ৮ ই আগষ্ট রাষ্ট্রপতির আদেশ জারী করে বাংলাদেশের বিমা শিল্পকে জাতীয়করণ করা হয় । জাতীয়করণ অধ্যাদেশ অনুযায়ী দেশের বিমা ব্যবসা পরিচালনার জন্য মোট ৫ টি কর্পোরেশন গঠন করা হয় ।
 
জীবন বিমা ব্যবসা পরিচালনার জন্য দুটো । 
১. সুরমা জীবন বিমা কর্পোরেশন 
২. রূপসা জীবন বিমা কর্পোরেশন

 সাধারণ বিমা ব্যবসা পরিচালনার জন্য দুটো ।
 ১. তিস্তা বিমা কর্পোরেশন 
২. কর্ণফুলী বিমা কর্পোরেশন 

উপরোক্ত মোট ৪ টি কর্পোরেশন তদারকির জন্য গঠন করা হলো " জাতীয় বিমা কর্পোরেশন " । এই কর্পোরেশন নিজে কোন ব্যবসা করতো না । ব্যবসা করতো অন্য চারটি কর্পোরেশন । ১৯৭৩ সালে ১ লা জানুয়ারী থেকে এই ৪ টি কর্পোরেশন পুরোদমে কাজ শুরু করে । কিন্তু পাঁচ মাস না যেতেই সরকার ১৯৭৩ সালের ১৪ ই মে একটি অধ্যাদেশ জারী করে ৫ টি কর্পোরেশন ভেঙ্গে দিয়ে প্রতিষ্ঠা করলেন ২ টি কর্পোরেশন ।
 জীবন বিমা ব্যবসার জন্য " জীবন বিমা কর্পোরেশন " এবং সাধারণ বিমার ব্যবসার জন্য " সাধারণ বিমা কর্পোরেশন " । এখানে উল্লেখ্য যে , পাকিস্তানী কোম্পানী ছাড়া অন্যান্য যেসব বিদেশী কোম্পানী শুধু জীবন বিমা করতো তাদের জাতীয়করণের অধ্যাদেশের আওতাধীনে আনা হয়নি । তবে জীবন বিম ব্যবসায় লিপ্ত বিদেশী কোম্পানী সমূহকে নির্দেশ দেয়া হলো ব্যবসা করার জন্য নতুনভাবে রেজিষ্ট্রেশন নিতে হবে । তখন বাংলাদেশে আমেরিকান লই ইনসিওরেন্স কোং , নরউনিয়ন ইনসিওরেন্স সোসাইটি ও প্রুডিনিসয়াল এ্যাসুরে কোং এই তিনটি বিদেশী কোম্পানীর মধ্যে আমেরিকান লইফ ইনসিওরেন্স কে তাদের ব্যবসা পরিচালনার জন্য রেজিষ্ট্রেশন নতুন করে করলো । এটি এখন বাংলাদেশে ব্যবসা করছে , এ ছাড়াও পোষ্টাল লাইফও আগের মত সরক খাতে জীবন বিমা ব্যবসা করে চলেছে । সরকারের বিরাষ্ট্রীয়করণ নীতির প্রেক্ষিতে ১৯৮৫ সালে সাধারণ নি ব্যবসার জন্যে ২৪ টি এবং জীবন বিমার জন্যে ৫ টি ব্যক্তি মালিকানা কোম্পনি প্রতিষ্ঠাত হয়েছে । এসব কোম্পানী গুলো ইতিমধ্যে প্রিমিয়াম আ সম্পদের আহরণে যথেষ্ট অগ্রসর হয়েছে । জুলাই'৯৯ - এ দেশে আরও ৩০ বিমা কোম্পানী পরিচালনার অনুমতি পেয়েছে , তার মধ্যে ১৯ টি সাধারণ কোং এবং ১১ টি জীবনবিমা কোং ২০১৩ সালে নতুন ১৬ টি বিমা কোম্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার তার মধ্যে ২ টি সাধারণ বিমা কোম্পানী এবং ১৪ টি জীবন বিমা কোম্পানী । এ থেকে ধরে নেয়া যায় , বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিমা ব্যবসা রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিমালিকানা খাত পাশাপাশি সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উত্তরোত্তর উন্নতি লাভ করছে । 

কোন মন্তব্য নেই:

Post Top Ad